Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশে আরবি খেজুর চাষ

আরবি খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ফল। প্রধানত পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকা দেশগুলোতে এ ফলের চাষ প্রচলন বেশি। অনেকের মতে ইরাক অথবা মিসর খেজুর ফলের আদি স্থান। প্রাচীনকাল থেকে খেজুর ফলের বাগান সৃষ্টি করা এবং তা থেকে প্রাপ্ত খাদ্য ও ফলের উৎস হিসেবে খেজুর মানুষের জীবন ধারণের অন্যতম অবলম্বন ছিল। আরব দেশগুলোর মরুভূমি এলাকায় যেখানে অন্য কোনো গাছপালা জন্মানো সহজ হয় না সেখানে খেজুর বাগান সৃষ্টি করে মরুদ্যান সৃষ্টি করা হতো। আরবি খেজুর যেসব দেশে বেশি চাষ হয় তার মধ্যে মিসর, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, আলজেরিয়া, সুদান, ওমান, লিবিয়া ও তিউনেশিয়া অন্যতম। অধুনা চীন, ভারত ও আমেরিকার কিছু অংশে সফলভাবে খেজুর চাষ করা হচ্ছে। রমজান মাসে সৌদি খেজুর দিয়ে ইফতারি করার প্রচলন মুসলিম দেশগুলোতে আছে। বাংলাদেশসহ সব মুসলিম দেশ প্রচুর খেজুর আমদানি করে অথবা নিজেদের উৎপাদন থেকে রমজান মাসে প্রচুর খেজুরের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

 

বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশালসহ সারা দেশে কম-বেশি খেজুর চাষ করা হয় মূলত রস ও গুড় তৈরির কাজে। দেশি জাতের খেজুর গাছে যে পরিমাণ ফল ধরে তা উন্নত মানের নয়, তাই ফল হিসেবে খাওয়ার তেমন প্রচলন নেই। গত ১৫-২০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার কিছু আগ্রহী চাষি সীমিত আকারে খেজুর চাষ করে সফল হয়েছে। তারা বীজ থেকে তৈরি বাগান করায় তাতে জাতের গুণাগুণ রক্ষা হয় না। আধুনিক সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও পরাগায়নে সক্ষমতার অভাবে খেজুর গাছ থেকে তারা কম ফলন পায়।
 

ডিএই সরকারিভাবে প্রথম আরব দেশ থেকে উন্নত জাতের খেজুর কলম আমদানি করে বিভিন্ন জেলার হর্টিকালচার সেন্টারগুলোতে এজাতের খেজুরের বাগান সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক গাছ ফুল ধরা অবস্থায় এনে ফেব্রুয়ারি-২০১৭ মাসে রোপণ করা হয়েছে, তাতে ফল ধরা আরম্ভ করেছে। অচিরেই বাংলাদেশ আরবি খেজুর উৎপাদনে সফলতা অর্জন করবে।
 

আবহাওয়া ও মাটি : পর্যাপ্ত রোদ, কম আর্দ্রতা, শুকনা ও কম বৃষ্টিপাত, উষ্ণ আবহাওয়া এ ফল চাষের জন্য উপযোগী। বেশি শীত এবং সাময়িক জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ত সহিষ্ণু গুণাগুণ এ গাছের আছে। ফুল ফোটা ও ফল ধরার সময় বেশি বৃষ্টিপাত ভালো না। একই কারণে এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় এবং পার্বত্য জেলাগুলোতে সৌদি খেজুর চাষ সম্প্রসারণ করার সুযোগ আছে। বেলে-দো-আঁশ মাটি এ জাতের খেজুর চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তবে মাটি অনুকূল না হলে রোপণের আগে গর্তের মাপ র্৬দ্ধর্৬ দ্ধর্৩ তৈরি করে তাতে জৈবপদার্থ ও বেলে মাটি দিয়ে তা ভরাট করে নিয়ে খুব সহজেই মাটিকে উপযোগী করে নেয়া যায়। পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত উচ্চ জমি এ ফল চাষের জন্য উপযোগী। মাটির উপরের স্তরে র্৬-র্৭ ফুটের মধ্যে হাডপ্যান থাকলে গর্ত তৈরিকালে শাবল দিয়ে ভেঙে দিতে হবে।
 

পুষ্টিমান : খেজুর অতি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। এতে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস ও ক্যালোরি সমৃদ্ধ। সুষম খাদ্য হিসেবে খেজুরের জুড়ি নেই। এ ফলের ঔষধিগুণ খুব বেশি। আহারে হজম শক্তি বাড়ায়, রক্ত স্বল্পতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, এলার্জি ও ক্যান্সার রোধক হিসেবে কাজ করে। খেজুর দেহে শক্তি জোগায়, হার্টকে সুস্থ রাখে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, দেহের হাড় ও দাঁতকে মজবুত রাখে। রক্তশূন্যতা, গলাব্যথা, ডায়রিয়া, সুস্থ গর্ভধারণে এ ফল অতি উপকারী।
 

জাত : পৃথিবীতে প্রায় এক হাজারের বেশি খেজুরের জাত রয়েছে। সৌদি দেশগুলোতেই এ জাতের সংখ্যা চার শতাধিক। যেহেতু তাল ও লটকন গাছের মতো খেজুরের পুরুষ-স্ত্রী গাছ আলাদাভাবে জন্মায়, এজন্য বীজ থেকে তৈরি গাছে প্রাকৃতিকভাবে নতুন জাতের সৃষ্টি হয়। তবে বীজ থেকে তৈরি চারায় প্রকৃত জাতের গুণাগুণ থাকে না। ফল ধরতে বেশি সময় লাগে, ফলের পরিমাণ ও মান আশাপদ হয় না। যেসব জাতের খেজুরের জনপ্রিয়তা বেশি এগুলোর মধ্যে বারহি, মেডজল, সামরান, খাতরাই, জাহেদি, খালাস, মরিয়ম, নিমেশি, আনবারাহ, জাম্বেলি, শিশি, লুলু, সুলতানা, আজুয়া, ইয়াবনি, ডিগলিটনূর, আসমাউলহাসনা অন্যতম। ডিএই এ পর্যন্ত ১৭টি আধুনিক উন্নত জাতের খেজুর কলম আমদানি করে বিভিন্ন জেলার হটিকালচার সেন্টারে বাগান সৃষ্টি করছে।
 

বংশবিস্তার : আরব দেশগুলো আগে পছন্দমতো জাতের কা- থেকে গজানো সাকার বা চারা সংগ্রহ করে তা দিয়ে বাগান সৃষ্টি করতেন। এছাড়া বীজের চারা দিয়েও খেজুর বাগান সৃষ্টি করার প্রচলন ছিল। তবে অধুনা টিস্যুকালচার পদ্ধতি অবলম্বনে উন্নত জাতগুলোর প্রচুর কলম তৈরি করে তা ব্যবহার জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। পুরনো পদ্ধতিতে কা- থেকে চারা কম পাওয়া যেত। বীজ থেকে তৈরি চারার গাছে ফল দিতে প্রায় ৬ বছর সময় লাগে। খেজুর গাছের কা- থেকে প্রাপ্ত চারা এবং টিস্যুকালচারের মাধ্যমে তৈরি চারা রোপণের ৩ বছর পর থেকেই গাছে ফুলফল ধরা শুরু হয়। এখন টিস্যুকালচারের মাধ্যমে খেজুর চারা উৎপাদন কাজে কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত থাকার কারণে উন্নত জাতের বাগান সৃষ্টি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্যান্য দেশগুলোও এর সুফল ভোগ করছে। এ দেশে ১৫-২০ বছর ধরে অনেকেই সীমিত আকারে খেজুর চাষ করছে তা বীজের তৈরি চারা দিয়ে, এতে ভালো জাতের প্রকৃত গুণাগুণ বজায় থাকে না, ফলের মান ও ফলন ভালো হয় না।
 

জমি নির্বাচন ও রোপণ : পানি নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত অপেক্ষাকৃত উঁচু প্রচুর আলো-বাতাস পায় এমন জমি খেজুর বাগানের জন্য নির্বাচন করা দরকার। বাগান তৈরির জন্য ২০ ফুট দূরত্বে সারি করে ২০ ফুট দূরে দূরে চারা রোপণের জন্য খেজুর বাগান নকশা তৈরি করে নেয়া প্রয়োজন। এক বা দুই সারি গাছ লাগানোর প্রয়োজনে ১৫-১৭ ফুট দূরত্ব দিলেই চলবে। বর্ষাকালে ১০-১২ ইঞ্চি পানি জমে থাকে এমন নিচু স্যাঁতসেঁতে জমিতে সর্জান পদ্ধতি অবলম্বনে বাগান সৃষ্টি করা সহজ। এ ক্ষেত্রে দুই সারির মাঝে ৭-৮ ফুট চওড়া এবং ২-৪ ফুট গভীর নালা কেটে উভয় পাশে গর্তের মাটি উঠিয়ে দিয়ে ১০-১২ ফুট চওড়া উঁচু বেড তৈরি করে নিয়ে সে বেডে খুব সহজেই সফলভাবে খেজুর বাগান সৃষ্টি করা যায়। বরিশাল জেলার রহমতপুর হর্টিকালচার সেন্টারে এ পদ্ধতি অবলম্বনে ৭২টি খেজুর গাছ বিশিষ্ট খেজুর বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বাগানের গাছের বাড়-বাড়ন্ত খুব উৎসাহজনক, যা আগামী দিনে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আরবি খেজুর চাষ সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য মডেল হিসেবে কাজ করবে।
 

গর্ত তৈরি ও তা ভরাটকরণ : রোপিত গাছের শিকড় যেন ঠিকমতো ছড়াতে পারে এজন্য ৬ ফুট চওড়া ও ৩ ফুট গভীর করে গর্ত তৈরি করে নিয়ে তা এক সপ্তাহ রোদে রেখে গর্তে সার ও মাটি দিয়ে পুনরায় ভরাট করে নেয়া প্রয়োজন। তৈরিকৃত গর্তে খড়কুটা দিয়ে ভরাট করে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলে গর্তের মাটি শোধন করা যাবে। খেজুর চারা রোপণের আগে যেসব সার ও উপাদান মিশানো প্রয়োজন তা হলো মোটাবালু (সিলেট স্যান্ড) ৩০%, পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার ৪০% এবং ভিটে মাটি বা বেলে দো-আঁশ মাটি ৩০%। এছাড়াও এতে আরও মেশাতে হবে ১০-১৫ কেজি কোকোডাস্ট বা নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া, সমপরিমাণ কেঁচো সার। হাড়ের গুঁড়া ১ কেজি, ইউরিয়া-৩০০ গ্রাম, টিএসপি-৪০০ গ্রাম, এমওপি-৫০০ গ্রাম। এছাড়া জিঙ্ক সালফেট, ম্যাগসালফেট, ফেরাস সালফেটে ও বোরন- প্রতি গাছে ১০০ গ্রাম করে মোট ৪০০ গ্রাম মেশানো প্রয়োজন। রোগবালাই প্রতিহত করার জন্য উপযোগী ছত্রাক নাশক ও দানাদার কীটনাশক ১০০ গ্রাম করে মোট ২০০ গ্রাম মেশাতে হবে। এসব একত্রে মিশেয়ে গর্ত ভরে পানি দিয়ে কয়েক দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে। এভাবে গর্ত ভরাট করার দুই সপ্তাহ পর তা গাছ রোপণের জন্য উপযোগী হবে।
 

চারা রোপণ : খেজুরের চারা সমতল থেকে এক ফুট ওপরে রোপণ করতে হবে। এজন্য গর্ত ভরাট করা মাটি উঠিয়ে মধ্যভাগ উঁচু করে নিতে হবে। এরপর ক্রমান্বয়ে তা বাইরের দিক ঢালু করে নালা বরাবর মিলাতে হবে। গাছ রোপণ করা হলে গাছের গোড়া থেকে ২.৫ ফুট দূরে বৃত্তাকার করে ১০-১২ ইঞ্চি চওড়া ও ১২ ইঞ্চি গভীর নালা তৈরি করে এ নালার মাটি বাইরের দিক সুন্দরভাবে বৃত্তাকারে উঁচু আইল বেঁধে দিতে হবে। গাছ রোপণ শেষে নালায় ৮-১০ দিনের ব্যবধানে পানি দিয়ে নালা ভর্তি করে দিতে হবে। গাছ এ নালার পানি শুষে নেবে।
 

সেচ ও নিকাশ : বর্ষাকালে যেন বাগানে কোনো মতেই পানি না জমে এজন্য পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। খরা মৌসুমে নিয়মিত গাছের গোড়ায় সেচ দিয়ে ভেজাতে হবে। মাটিতে রসের অবস্থা বুঝে ৭-১৫ দিনের ব্যবধানে নালা ভর্তি করে পানি সেচ দিয়ে গাছের রসের অভাব দূর করতে হবে। ভালোভাবে গাছের বৃদ্ধি, বেশি উন্নত মানের ফল প্রাপ্তি, প্রয়োজনীয় পানি সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। বয়স্ক খেজুর গাছের শিকড় গোড়া থেকে প্রায় ৪-৫ ফুট বৃত্তাকারে চারদিকে ৩-৪ ফুট গভীরতায় প্রবেশ করে। এজন্য শুকনা মৌসুমে এ শিকড় ছড়ানো এলাকায় রসের অভাব দূরীকরণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
 

মালচিং ও ট্রেনিংপ্রুনিং : শুকনা মৌসুমে গাছের গোড়ার চারধারে ২-৩ ফুট দূর পর্যন্ত বৃত্তাকারে খড়, লতাপাতা বা কচুরিপানা দিয়ে মালচিং দিতে হবে। তাতে মাটির রস সংরক্ষিত থাকে এতে ঘন ঘন সেচ দেয়ার প্রয়োজন হবে না। মালচিং দেয়ার ফলে গাছের গোড়ার চারদিক আগাছামুক্ত থাকবে, পরিবেশ অনুকূল হবে, পরে এসব লতা-পাতা পচে জৈবসার হিসেবে কাজ করবে। গাছ বড় হলে উপরি ঊর্ধ্বমুখী গাছের পাতা রেখে নিচে ঝুলে পড়া পুরনো মরা পাতাগুলো কা-ের গোড়া থেকে ৭-৮ ইঞ্চি ছেড়ে ছেঁটে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও উপরের দিকের অফলন্ত ফলের ছড়া ও ফুল-ফলের শক্ত ঢাকনা সাবধানে অপসারণ করতে হবে। সাথে সাথে কাটা অংশে ছত্রাকনাশক বা বোর্দ মিক্সার পেস্ট দিয়ে প্রলেপ দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
 

পরিচর্যা : গাছ রোপণ করে তা কাঠি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে সম্ভাব্য সোজা রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথম কয়েক বছর পাতা শুকালে তা কেটে দিতে হবে। কোন মতেই গাছের কাঁচা পাতা কাটা যাবে না। তবে বছরে একবার ফল সংগ্রহ শেষে নিচের দিকে ঝুলে পড়া বয়স্ক অপ্রয়োজনীয় পাতা অপসারণ করতে হবে। গাছের গোড়া ও কা- থেকে গজানো শাখা বাড়তে দিলে গাছে ফলদান ক্ষমতা কমে যাবে। তবে চারা সংগ্রহের প্রয়োজনে গোড়ার কাছাকাছি গজানো কিছু সাকার রেখে অবশিষ্ট সাকারগুলো নিয়মিত ছেঁটে দিতে হবে। সংগৃহীত চারা বেশি ছায়ায় সংরক্ষিত থাকার কারণে চারা রোপণের পর সূর্যের তাপে খেজুর চারা ঝলসে না যায় এজন্য রোপণের প্রথম ১০-১৫ দিন উত্তর-পূর্ব দিক উন্মুক্ত রেখে পাতলা ছালা দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক ভালোভাবে ঢেকে দিয়ে গাছকে হালকা ছায়া দেয়া প্রয়োজন হবে। বিকল্প ব্যবস্থায় গাছগুলোকে ১৮ ইঞ্চি বিশিষ্ট মাটির টবে উপযোগী পটিং মিডিয়া দিয়ে আধাছায়ায় ২-৩ মাস সংরক্ষণ করে পরে সেগুলো বাগানে রোপণ উপযোগী হবে।
 

সার প্রয়োগ : আরবি খেজুর গাছে ৪ মাসের ব্যবধানে নিয়মিত সার প্রয়োগ করা জরুরি। তাতে গাছ ভালোভাবে বাড়বে, বেশি ফল দানে সক্ষম হবে। নারিকেল, সুপারির মতো এরা পামী গোত্রীয় বলে পটাশ পছন্দ করে। বিভিন্ন বয়সের গাছে যে সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন তা হলো-    
 

প্রতি বছরের জন্য সুপারিশকৃত সারগুলো ৩ ভাগে ভাগ করে নিয়ে প্রতি ডোজ মে-জুন মাসে একবার এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ও ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে আরও দুইবার প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়াও অনু খাদ্যগুলো বিশেষ করে জিঙ্কসালফেট, ম্যাগসালফেট, ফেরাল সালফেট ও বোরন ও আইরোল বছরে একবার করে গাছের বয়স বিবেচনায় প্রতিষ্ঠাতে ২০০-৩০০ গ্রাম করে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সার প্রয়োগ করার পরপরই ভালোভাবে সেচ দিতে হবে। গাছের গোড়া ছেড়ে যে অংশে শিকড় ছড়ায় সে অংশে সার প্রয়োগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন সার প্রয়োগকালে গাছের শিকড় কম আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ভালো ব্যান্ডের ঘচক বা ঘচকঝ মিশ্র সার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গাছের প্রথম অবস্থার তুলনায় নাইট্রোজেন জাতীয় সার প্রয়োগ কিছু বেশি প্রয়োজন হয়। ফুল-ফল ধরা আরম্ভ করলে পটাশ ও ফসফরাসের পরিমাণ বাড়াতে হবে। অনেকে অনুখাদ্যসমৃদ্ধ কোনো কোনো সার পানিতে গুলে যায় এমন সার প্রয়োগ করে গাছকে সুস্থ রাখে।
 

পোকা ও রোগ দমন : নারিকেল, তাল ও খেজুর গাছের শিকড়ের অগ্রভাগ নরম ও মিষ্টি, যা উঁই পোকাসহ মাটিতে অবস্থানকারী বিভিন্ন পোকা ও নিমাটোডকে আকৃষ্ট করে। এ জন্য মাটিতে ব্যবহার উপযোগী দানাদার কীটনাশক ও তরল কীটনাশক (ইমিডাক্লোরোপিড/ডার্সবান) দু-তিন মাসের ব্যবধানে নিয়মিত ব্যবহার করে মাটিতে অবস্থানকারী পোকা দমন ব্যবস্থা নিতে হবে। খেজুর গাছেও রাইনো বিটেল (গ-ার পোকা), রেড পাম উইভিল, স্কেল পোকার উপদ্রব বেশি দেখা যায়। এজন্য বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ইমিডাক্লোরোপিড অথবা ক্লোরোপাইরিফস দলীয় কীটনাশক দিয়ে ২-৩ সপ্তাহের ব্যবধানে কচি পাতা ও পাতার গোড়ার অংশ ভালোভাবে স্প্রে করে গাছকে রক্ষা করা যাবে। খেজুর গাছে মাইটের উপদ্রব মাঝে মধ্যে দেখা যায়। এ জন্য ২-৩ সপ্তাহের ব্যবধানে মাইটনাশক ব্যবহার করে গাছকে সুস্থ রাখা উচিত হবে।
 

রোগ : মাটিতে অবস্থানকারী ছত্রাক, প্রুনিং করার কারণে ক্ষত স্থানে রোগ এবং গজানো পাতার পুরো অংশে কাল-বাদামি দাগ পড়া রোগের আক্রমণ খেজুর গাছে বেশি দেখা যায়। এজন্য ম্যানকোজেভ/কার্বোন্ডাজিম বা বোর্দমিক্সচার দিয়ে ছত্রাকনাশক দিয়ে ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে নিয়মিত পাতা, কা- ও মাটিতে স্প্রে করে গাছকে সুস্থ রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে।
খেজুর গাছে পরাগায়ন : খেজুর গাছের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদাভাবে জন্মে। এজন্য সুস্থ, বড় ও ভালো মানের খেজুর ফলের জন্য ফুটন্ত স্ত্রী ফুলের ছড়া বের হওয়ার সাথে সাথে পুরুষ গাছের পরাগরেণু দিয়ে সময়মতো পরাগায়ন করা অত্যাবশ্যক। সুস্থ সবল বড় আকারের পুরুষ ফুল দানে সক্ষম এমন গাছ থেকে পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে সাধারণ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হলে তা দুই বছর পর্যন্ত পরাগায়নের কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে তাজা পরাগ রেণু ব্যবহার করা ভালো। সৌদি খেজুর গাছে জানুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল ফুটে। উভয় প্রকার ফুলের কাঁদি একটা শক্ত আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। আবরণের ভেতরে ফুল বড় হয়ে পরাগায়নের উপযোগী হলে বাইরের আবরণটা আস্তে আস্তে ফাটা শুরু হয়। এ অবস্থায় পুরুষ ফুলের কাঁদির আবরণ অপসারণ করে নিয়ে হালকা রোদে শুকিয়ে নিয়ে এ পরাগ রেণু সাবধানে আলাদা করে নিয়ে কাগজে মুড়িয়ে তা পলিথিন কভার দিয়ে ফ্রিজের নরমাল চেম্বারে সংরক্ষণ করতে হয়।

 

এরপর স্ত্রী খেজুর গাছের ফুলের কাঁদি বড় হয়ে বাইরের শক্ত আবরণে ফাটল ধরা আরম্ভ করলে তা পরাগায়ন করার উপযোগী হয়। এ সময় ফাটল ধরা শক্ত আবরণ ধারালো ছুরি দিয়ে অপসারণ করে ছড়ার ভেতরের অংশ বের করে দামি নরম তুলি বা ব্রাশ দিয়ে সামান্য পরিমাণ পরাগ রেণু দিয়ে স্ত্রী ফুলে এ পরাগ রেণু হালকাভাবে ছুয়ে বা ঝেড়ে দিতে হয়। এ ছাড়া পুরুষ ফুলের দু-একটা ছাড়া স্ত্রী ফুলের আগায় বেঁধে রাখতে হয়। পরাগায়ন করা ফুলের ছড়া পাতলা ব্রাউন কাগজের ঠোঙা দিয়ে হালকাভাবে ঢেকে দিতে হয়। এর ৩-৪ সপ্তাহ পর আবরণটা সরিয়ে ফেলতে হয়। পরাগায়নকালে ছড়ার কাছাকাছি খেজুরের ছুঁচালো কাঁটাগুলো সিকেচার দিয়ে অপসারণ করে নিলে কাঁটার আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাগানে প্রতি ১৫-২০টা স্ত্রী গাছের জন্য একটা করে পুরুষ গাছ রাখার কারণে বাতাসের ও মৌমাছি বা উপকারী কীটপতঙ্গের মাধ্যমে পরাগায়ন কাজ সমধা হয়। এতে ৬০-৮০% পর্যন্ত ফল ধরানো সম্ভব।
 

ফল সংগ্রহ : পরাগায়ন করার ৩-৪ মাস পর খেজুর ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়। কতগুলো জাতের পুষ্ট কাঁচা-পাকা ফল উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। অন্য জাতের ফল পরিপক্ব অবস্থায় বাদামি/গাঢ় বাদামি/কালো রঙ ধারণ করলে তা সংগ্রহ, সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার বা বাজারজাত করা হয়। একটা সুস্থ সবল গাছ থেকে বছরে জাতভেদে ৭০-১৫০ কেজি খেজুর ফল পাওয়া যায়। উত্তম ব্যবস্থাপনায় কোনো কোনো জাতের গাছে প্রায় ৩০০ কেজি পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। পরাগায়নের পর ৭-১০টা সুস্থ সবল কাঁদি রেখে অবশিষ্ট কাঁদিগুলো শুরুতেই অপসারণ করা দরকার। এ ব্যবস্থায় অবশিষ্ট কাঁদিগুলো থেকে বেশি আকর্ষণীয় বড় আকারের ফল পাওয়া নিশ্চিত হবে। খেজুর ফল ধীরে ধীরে বড় হওয়া আরম্ভ করলে তা ফলের ভারে ঝুলে পড়ে। এ ফলন্ত ছড়া পাতার ডগায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফল বড় হতে বাধা সৃষ্টি করে, তাতে ফলন কমে যায়। খেজুর ফলের থোকা যেন অবাধে আংশিকভাবে ঝুলতে পারে এজন্য কাঁটা পরিষ্কার করে দিয়ে ফলকে অবাধে বাড়তে দেয়া দরকার। খেজুরের ভারে একেকটা কাঁদি যেন ভেঙে না পড়ে এজন্য কাঁদির ফুল ধরা শুরু অংশে হালকাভাবে দড়ি বেঁধে দিয়ে ফলের কাঁদিকে উপরের ডালায় বেঁধে দিলে ভেঙে যাওয়া বা বেশি ঝুলে পড়া রোধ ব্যবস্থা নিতে হয়। ফল কিছুটা বড় হলে এক ধরনের মাছি পোকা ও পাখির উপদ্রব বাড়তে থাকে। এজন্য ঘন মশারি দিয়ে ঢিলা ব্যাগ তৈরি করে ফলগুলোকে সুন্দরভাবে ঢেকে দিতে হয়।
 

এছাড়া লম্বা ব্যাগের নিচে ফল পুষ্ট হলে বা পাকলে নিচে জমা হয় এবং নিচের গিট ফুলে ফল গ্রহণ করা হয়। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় আরব দেশ থেকে উন্নত জাতের খেজুর কলম সংগ্রহ করে আধুনিক প্রযুক্তি অবলম্বনে এ জাতের খেজুর ডিএই’র আওতাধীন বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারে ও আগ্রহী কৃষক পর্যায়ে বাগান সৃষ্টির যে মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার সফলতা বয়ে আনুক এবং এ দেশে হাইভ্যালু অতি লাভজনক খেজুর ফল চাষ সম্প্রসারণের গতি বেগবান হোক পরিশেষে এটাই একান্তভাবে কাম্য।

 

এম এনামুল হক*

*মহাপরিচালক (অব.), ডিএই এবং ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট (হর্টিকালচার) বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প; মোবাইল ০১৯১৭০৫৫২০৫


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon